Header Ads

*"বাবা, আমার এই শেষ কালটায় আর আমাকে মুসলমানের ছোঁয়া-টোয়া খাইও না।"

*- :      শ্রী শ্রী মায়ের জীবনকথা      : -*

*"ওঁ যথাগ্নের্দাহিকা শক্তিঃ রামকৃষ্ণে স্থিতা হি যা।*
*সর্ববিদ্যাস্বরূপাং তাং সারদাং প্রণমাম্যহম।।"*
   জাতিবিচার সম্বন্ধে অনেক কথা আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি। ঠাকুরের বাণী "ভক্তের জাত নাই" - তিনি আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয়। তবে ধর্মজগতে এই সাম্য মানিয়া লইলেও তিনি সমাজবিপ্লবের পক্ষপাতী ছিলেন না, লৌকিক ব্যবহারে সমাজব্যবস্থাই মানিয়া চলিতেন।
   জনৈক দীক্ষার্থীর কুলগুরু আছেন জানিয়া তিনি মন্ত্রদানে অসম্মত হইয়া বলিয়াছিলেন, *"কুলধর্মানুযায়ী চলা উচিত; জাতিবিচার সংসারে থাকলে মেনে চলতে হয়।"*

   শ্রীমায়ের শেষ অসুখের সময় যখন তাঁহাকে পাঁউরুটি দিবার ব্যবস্থা হয়, তখন তিনি বলেন,
Sri Sarada Devi

Sri Sarada Devi

*"বাবা, আমার এই শেষ কালটায় আর আমাকে মুসলমানের ছোঁয়া-টোয়া খাইও না।"* 
কাজেই তাঁহাকে ব্রাহ্মণের প্রস্তুত রুটি দেওয়া হইত। পরে কলের তৈয়ারি বলিয়া বুঝাইয়া মিল্ক রোল পাঁউরুটি দেওয়া হইয়াছিল।
   এই সময় তাঁহার খুব অরুচি - অল্প ভাত খান। একদিন খাইবার সময় ডাক্তার কাঞ্জিলাল আসিয়া দেখিলেন, ভাতের পরিমান একটু বেশি হইয়াছে। অমনি সেবিকাকে ভর্ৎসনা করিয়া বলিলেন যে, তাঁহার দ্বারা ঠিক সেবা হইবে না। সুতরাং পরদিন হইতে দুইজন নার্সের ব্যবস্থা করা হইবে।
   ডাক্তার চলিয়া গেলে মা সেবিকাকে বলিলেন, *"হ্যাঁ, আমি সেই জুতোপরা মেয়েগুলোর সেবা নেব ও মনে করেছে? তা আমি পারব না। তুমি কাজকর্ম যেমন করছ করবে।"* বস্তুত নার্স আর আসিল না।
   একদিকে এইরূপ জাতিবিচার এবং অপর দিকে আমজদ প্রভৃতির প্রতি সর্বপ্রকার আত্মীয়তা-প্রদর্শনের মধ্যে অসামঞ্জস্যের সমাধান করিতে হইলে আমাদিগকে ঐ বিষয়ক আরও কয়েকটি দৃষ্টান্তের অনুসরণ করিতে হইবে।
   শিক্ষিত, উচ্চপদস্থ এবং অন্য সর্বপ্রকারে প্রণম্য অব্রাহ্মণের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে শ্রীমা দ্বিধা বোধ করিতেন না।
   কবিরাজ শ্যামাদাস বাচস্পতি মহাশয় উদ্বোধনে রাধুকে দেখিতে আসিলে (১১ আশ্বিন, ১৩২৫) মায়ের আদেশে রাধু তাঁহাকে প্রণাম করিল।
   কবিরাজ মহাশয় চলিয়া গেলে কেহ কেহ বলিলেন, "উনি কি ব্রাহ্মণ?" মা বলিলেন, *"না, বৈদ্য।"* প্রশ্ন হইল, "তবে যে প্রণাম করতে বললেন?" মা উত্তর দিলেন, *"তা করবে না? কত বড় বিজ্ঞ; ওঁরা ব্রাহ্মণতুল্য। ওঁকে প্রণাম করবে না তো কাকে করবে?"*
   একজন কায়স্থ ভক্ত অপর চারিজন ভক্তসহ জয়রামবাটীতে গিয়াছিলেন; তখন মায়ের নূতন বাটী প্রস্তুত হইতেছে। শ্রীমা কায়স্থ ভক্তকে দেখাইয়া রাধুকে বলিলেন, *"রাধু, তোর দাদা এসেছে, প্রণাম কর।"*
   ভক্ত তখন ভাবিতেছেন, "সে কি? আমি যে কায়স্থ!" সঙ্গে সঙ্গে মনে সিদ্ধান্ত উদিত হইল, "মা তো আর আমার অমঙ্গল করবেন না।" পরে উভয়ে উভয়কে প্রণাম করিলেন।
   এক ভক্তিমতী মহিলা উদ্বোধনে আসিয়া শ্রীমাকে জানাইলেন যে, তিনি স্বপ্নে দীক্ষা পাইয়াছেন। শ্রীমা সব শুনিয়া ঐ মন্ত্রেরই অনুমোদন করিলেন।
   পরে তাঁহার পরিচয় লইয়া যখন জানিলেন যে, তিনি মায়েরই দীক্ষিত  ভক্তের পত্নী, তখন কহিলেন, *"এতক্ষণ বলনি কেন? ও রাধু, ও মাকু, ম্যানেজারবাবুর স্ত্রীকে এসে প্রমান কর।"*
   স্তম্ভিতা হইয়া মহিলা তখন বলিলেন, "মা, এ বলেন কি? আমি যে কায়স্থ-সন্তান, এরা ব্রাহ্মণ-সন্তান হয়ে কি করে আমাকে প্রণাম করবে?" মা কহিলেন, *"ওসব বলতে নেই। তুমি ভক্তমানুষ, ভক্তের জাত নেই; তোমাকে প্রণাম করলে ওদের কল্যাণ হবে।"*
   রাধু ও মাকু আসিলে ভক্ত স্ত্রীলোকটি তাহাদের পা জড়াইয়া ধরিতেই মা বলিলেন, *"থাক, থাক, দেবে না। ওরা ভক্ত কিনা, তাই সর্বভূতে ঠাকুরকে দেখছে।"*
   ঐ উচ্চ ভিত্তিতেই তিনি মানবীয় সম্বন্ধকে স্থাপন করিতে চাহিতেন; কিন্তু মানুষ তাহা না বুঝিয়া প্রতি কথাকে সামাজিক অর্থেই গ্রহণ করিত।
*"জননীং সারদাং দেবীং রামকৃষ্ণং জগদ্‌গুরুম্।*
*পাদপদ্মে তয়ো শ্রিত্বা প্রণমামি মুহুর্মুহুঃ।।"*
Powered by Blogger.