Header Ads

*সারগাছির স্মৃতি* *--স্বামী সুহিতানন্দ*

*সারগাছির স্মৃতি**--স্বামী সুহিতানন্দ*

[৬৭]
৫.১২.৫৯ 
তিন -চার দিন আগে বেলুড়ের বি.টি . কলেজ থেকে আর্টের একজন অধ্যাপক আসেন চৈতন্যদেবের দুটি ছবি নিয়ে --ছাপানো হবে স্বামী সারদেশানন্দ লিখত পুস্তকে। মহারাজ দেখে খুব প্রশংসা করে বললেন ,  *"আমাদের দেশে ছবির কদর নেই। আমার এক বন্ধু ফ্রান্সে একটি ছবি আঁকবার জন্য ১৬,০০০ টাকা পেয়েছিল। আর আমাদের দেশে কেউ কদর জানে না!  তবে চৈতন্যদেব যেরকম গোছানো ছিলেন তাতে তাঁর চাদর এভাবে ঝুলে পরবে বলে মনে হয় না। আর পা -গুলো ছিল বড় বড়।"*
১৮•১২•৫৯
সেবক : আমরা ঘর-বাড়ি ছেড়েছি এজন্য যে,  এই জীবনেই আধ্যাত্মরস আস্বাদন করব।  যদি জীবমুক্ত না হওয়া যায়,  তবে কি জীবন ত্যাগ করা উচিত?
মহারাজ : *দেখ ,  জীবমুক্ত এখন নয়। দশ বছর পরে ওসব। এখন সব পড়ো। মহারাজদের জীবন সম্বন্ধে জানো ,  সঙ্ঘজীবন দেখো --পরে যা হয় হবে। উত্তরাখণ্ডে এক চল আছে --কোনো কোনো সাধক এ-জীবনে চরম প্রাপ্তি অসম্ভব দেখে স্বেচ্ছায়  দেহত্যাগ করে --ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে যেন পরজন্মে ভগবানকে ডাকার অনুকূল শরীর -মন পায়। এ-ও একরকম আত্মহত্যা।*
প্রশ্ন : যাঁদের  এটা শেষজন্ম ,   তাঁরা এ-জন্মে  যা করবেন,  তারও কি এ-জন্মে ভোগান্ত হবে।
মহারাজ :    *নিশ্চয়ই  ; এ-জন্মে যা করবে তার ঠিক ফল পেতে হবে --তবেই ছুটি!  সেই জন্যই তো বলি --প্রকৃতির নিয়ম লঙ্ঘন কোরো না। বাড়িতে আমার মা বলতেন, 'দুঃখী হয় চন্ডালের শাপে / খণ্ডাতে নারে বিধাতার বাপে ।'  কাউকে কষ্ট দেবে না।*
*যারা বলে আমাদের হবে না -আমরা পাপী ,  তারা পলায়ন-মনোবৃত্তিসম্পন্ন কিছু করতে চায় না  ,  ফাঁকি দিতে চায়। আর যে যা করে সে তা-ই চায়,  অর্থাৎ তারা প্রয়োজনবোধ নেই।*
প্রশ্ন : মহারাজ  , যদি আমরা কিছু সাধন-ভজন না করে পড়ে থাকি ,  আমাদের কবে মুক্তি হবে ?
মহারাজ : *সকৃদাগামী । ১৯৩৪ সালে স্বামী শ্রদ্ধানন্দ কলেজে পড়ত ( স্বামী শ্রদ্ধানন্দ সানফ্রান্সিস্কোতে দেহত্যাগ করেন)। আমার কাছে বসে গল্প করত।  একদিন কথায় কথায় বললাম,  'বাঁদররা রামচন্দ্রের ব্রতকার্যে পাথর বয়ে মুক্ত হয়েছিল।' এই কথাটা তাকে এত মুগ্ধ করেছিল যে ,  ফিরে গিয়ে একটা নাটক লিখে মঞ্চস্থ করেছিল।  তেমনি , যদি ঠাকুরের ব্রতকার্যে সাহায্য করে সেও মুক্ত হবে।*
সেবক : ঠাকুরের ব্রতকার্য কী ?
মহারাজ  : *ভালবাসা,  সকলের কল্যাণচিন্তা করা --কীভাবে তাদের সেবা করা যায়। 'শিবজ্ঞানে জীবসেবা'। আর  , চার যোগ যে এক , সেটাও জানা। শুধু কর্ম করতে গিয়ে বহির্মুখ,  ধ্যান করতে করতে আধপাগলা  , জ্ঞানে পন্ডিত আর ভক্তিতে আবেগপ্রবণ --এই চারটের সমন্বয় প্রয়োজন। জ্ঞান না থাকলে এবং যোগ না থাকলে  ,  মানুষের শরীরের প্রতি আসক্তি এসে যায়। নারায়ণ বুদ্ধি দূরে পড়ে থাকে।*
মহারাজ দুপুরে বসে বসে ছবির বই দেখছেন। যেখানে ঠাকুর মাকে গহনা খুলতে নিষেধ করছেন ,  সেখানে ঠাকুরকে ছায়ার মতো এঁকেছে।
মহারাজ : *দেখ ,  এ-চেহারা তো খালি চোখে দেখা যায় না। এ ভাবতনু । প্রেমের চোখে দেখা যায় । এর ছায়া পড়ে না ,  যেখানে এঁকেছে  সে একথা জানে না।*

Powered by Blogger.