Header Ads

নীরব থাকা এবং নিজেকে সংযত রাখা।



[প্রব্রাজিকা বেদান্তপ্রাণা মাতাজী]

সাধুজীবনে সুন্দর দুটি কথা শোনা যায়ঃ-
"মৌনমাত্মবিনিগ্রহঃ"।
অর্থাৎ
মৌনী সাধু
মৌনী সাধু 
(ক) নীরব থাকা এবং  নিজেকে সংযত রাখা।
(খ)মনকে একটি বিষয়ে মগ্ন রাখার অভ্যাস।

[[একাগ্রতা]]

🚩অনেক সময় কথা না কওয়া সাধুকে "মৌনীবাবা" বলা হয়। বাইরে কথা না বলে অনেকেই থাকেন,
কিন্তু মনে মনে অনবরত কথা বলে চলেন।

💛চুপ করে, শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারে সেই ব্যক্তি, ____ যার #মনটি    ✔মৌন,✔শান্ত,✔সংযত।
  যে-মন নানা চিন্তায় আন্দোলিত হয় না।
আমাদের দেশে বলে --> "তন্ থির তো মন থির্:।
◆স্থির আসনে নিশ্চল বসলে, --- মনও ধীরে ধীরে নিশ্চল হয়।
.......
💐💐💐একবার একটি সাধু পাহাড়ের ওপর একটি মন্দিরে প্রণাম করতে গেলেন। কিন্তু
প্রণামান্তে তিনি এখানে ওখানে না ঘুরে __ মন্দির অঙ্গনেই নির্দিষ্ট জায়গায় আসন করে বসলেন।
একদিন গেল, দুদিন গেল, তিনদিন গেল।
মৌনী সাধু
মৌনী সাধু 
মন্দির দেখাশোনা করত এক ভক্তিমান যুবক।
 মন্দিরের যেকোনও ব্যাপারে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হত।
পূজার্চনা ছাড়াও সেখানে সমাগম হত বহূ ভক্তের।
তবে মন্দিরটি পাহাড়ের উপর ___ লোকালয় থেকে দূরে। নির্জনে।
কাছে পিঠে মানুষের বসবাস নেই বললেই চলে।
নিচের গ্রাম থেকে পূজার জিনিসপত্র, ভোগের চাল-ডাল সবই কিনে আনতে হয়।
দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত যুবকটি খুবই "সৎ ও পরিশ্রমী"।
🌷নিত্য যারা প্রসাদ পায়, তাদের নাম খাতায় নিষ্ঠাভরে সে লিখে রাখে।
🌺দেবতার পূজা, ভোগরাগও ভারি ভক্তি ও নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করেন পুরোহিত।
💛💖💛ঐ যে নতুন সাধুটি এসেছেন ---- তিনি কখনও চোখ চেয়ে, কখনও ধ্যানের আবেশে -- চুপচাপ বসে আছেন আজ তিনদিন হল।
●মুখ ফুটে প্রসাদ ভিক্ষা চাননি।
●একটি কমন্ডলু ও আসন ছাড়া কিছুই নেই তাঁর সঙ্গে। কিন্তু
😍😍😍মুখটি ভারি প্রসন্ন।যেন কোনও তৃপ্তির আলোয় উজ্জ্বল। ভক্তিমান যুবকটি এতদিন সাধুটিকে লক্ষ করছে, আর
        নিজের মনে চিন্তা করছে ____ ***একটা মানুষ কী করে নির্বিকারে এমন একভাবে বসে থাকতে পারে?***
✔✔নিশ্চয়ই উচ্চকোটির কোনও মহাত্মা। আমরা এঁকে ভিক্ষাও দিই নি।কিছু দিলে আবার "খাতায় লিখে রাখতে হবে"।
যুবকটি শেষপর্যন্ত হাতজোড় করে সাধুটিকে প্রশ্ন করলঃ- ***মহারাজ, আপনার শুভনামটি কি?কোথা থেকে আসছেন? আপনার জন্য কী করতে পারি?***

😀সাধু শুধু হাসলেন। উত্তর দিলেন না। পরেরদিন যুবকটি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ-

***মহারাজ, একটু প্রসাদ গ্রহণ করবেন?***
✔এবার মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন সাধু।
***মহারাজ, এভাবে আগামীকালও একটু প্রসাদ গ্রহণ করবেন কী?***
✔এবার ও সাধু হেসে সম্মতি জানালেন। যুবকটি খুব খুশি ও নিশ্চিন্ত হল।
💛মন্দিরে দিনের পর দিন এই মহাত্মা উপবাসে থাকবেন--- ভাবাই যায় না।
যাহোক, হিসেবের খাতায় কি যে লিখবে ভেবে পেল না। কারণ __ সাধুটির কোনও নামও সে জানে না।
😍শেষপর্যন্ত চিন্তা করে লিখে রাখলঃ-- ***এক গ্রাসের মতন ভাত সেই সাধুটিকে দেওয়া হল, যে শান্ত  হয়ে বসে থাকে।*** দিনের পর দিন চলে যায় ____ ছয় মাস পর মন্দির পরিদর্শন করতে তহশীলদার এলেন।
যুবকটি খুবই সম্ভ্রমের সঙ্গে তাঁকে হিসেবপত্র দেখাল। তহশীলদার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, "ব্যাপার কী? এটা কী লিখেছ? যে সন্ন্যাসী মন্দিরের কোনও কাজকর্ম না করে চুপ করে বসে থাকে---- তাকে তুমি কেন প্রসাদ দেবে?"
যুবক তো অপ্রস্তুত !!কী  উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না। সাধুর প্রতি তহশীলদারের কোনও শ্রদ্ধাভক্তি নাই।
তহশীলদার আরও বললেন--- "সাধু যদি মন্দিরের  কোনও কাজ করে দেয়, তবেই প্রসাদ দেবে, নইলে নয়।
আচ্ছা আমিই সাধুর সঙ্গে এ-বিষয়ে কথা বলব।" তহশীলদার গটগট করে, হেঁটে মন্দির-চত্বরে সাধুর কাছে এলেন।
~ আপনার নাম কী?
কোনও উত্তর নেই।
~কোথা থেকে এসেছেন?
এবারও উত্তর নেই।
"কোনও কাজ না করে মন্দিরের প্রসাদ গ্রহণ করছেন --- এ চলবে না। হয় কোনও কাজ করুন, নইলে পথ দেখুন।"
সাধুটি নীরবে রইলেন। এতগুলো রূঢ়বাক্যের উত্তরেও--- হাসি মুখে বসে রইলেন।
😭এরপর সাধুটিকে  প্রসাদ  দেওয়া বন্ধ হল।
😀সাধু নির্বিকার। আরও তিনদিন কেটে গেল।
😪যে-যুবকটি দেখাশোনা করত ও সামান্য একটু প্রসাদ দিত, সে মনে মনে ভারি কষ্ট পাচ্ছে,
কিন্তু সে তো পরাধীন!!!
😰সাধুর হয়ে একটি কথা বললে,  হয়তো কাজটিই তার চলে যাবে!
এদিকে তহশীলদার তিনদিন পরে সাধুকে একই স্থানে নিঃশব্দে স্থির আসনে বসে থাকতে দেখে 😡😡😡রেগে অগ্নিশর্মা।
😡😡সাধুর কাছে গিয়ে চিৎকার করতে লাগলেন---
😁দেখুন, এখানে উপোস করে মরবার মতলব করছেন।কেন চুপ করে সারাদিন বসে থাকেন? ও সব হবে না!!
এখনই চলে যান।অথবা লোকজন ডেকে আপনাকে বিদেয় করব।
😍😀😍😀😝 এবার সাধুটি খুব জোরে হেসে উঠলেন।
✔পাহাড়ের ওপর থেকে সেই প্রাণখোলা 😜কৌতুকের হাসি প্রতিধ্বনিত হতে লাগল।
😇😀সাধু এবার কথা বললেন মৌনভঙ্গ করেঃ- ঠিক বলেছ, আমি চুপচাপ বসে থাকি।।
কিন্তু তুমি কি পাঁচ মিনিট চুপচাপ বসতে পারবে?
~~ ""এটা কি খুব কঠিন কাজ বলে মনে করছেন আপনি? আপনার মতো অনড়   হয়ে বসতে আমি খুব পারি। পাঁচ মিনিট কেন,  চাইলে পাঁচ ঘন্টা বসতেও আমার কোনও অসুবিধা নেই!!"
কথাটা বলেই সাধুর কাছে পা মুড়ে বসে পড়লেন তহশীলদার।
একমিনিটও হয় নি, বসার অনভ্যাসে উসখুস করতে লাগলেন।
আচমকা.....😱 সাধু এক চড় মারলেন তহশীলদারের গালে।
তহশীলদার তো সাধুর দুঃসাহস দেখে একেবারে😵স্তম্ভিত!!!
বলেই ফেললেন---> 😡আপনি জানের কার গায়ে হাত তুলেছেন???
😀সাধুটি হাসলেন। বললেন:- **তুমি তো চুপ করে বসতে পার নি। ছটফট করছ বসে বসে।
আর আমি কি তোমাকে নিজের স্ত্রী-পরিবারের কথা চিন্তা করতে বলেছিলাম???**
উত্তর খুঁজে না পেয়ে এবার তহশীলদার চুপ। আবার বসলেন। এবারে এক মিনিটও পার হয়নি,  আর একটা চড় খেলেন�
সাধু বললেন,**তোমার অফিসের হিসেবপত্রের চিন্তা করার জন্য এখানে বসতে তো বলিনি!!!
তুমি কষ্ট করে কিছুক্ষণ বসতে পার। কিন্তু মন চুপ করলে তবেই শান্ত হয়ে বসা যায়।
আর সেটা করা কি খুব সহজ মনে হচ্ছে ???**
এখন তহশীলদারের অবাক হওয়ার পালা।
 😭😭তিনি উঠে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন--- 💐মহারাজ -- চুপ করে বসে থাকা অতি কঠিন কাজ।
আমায় ক্ষমা করবেন। আর আপনি অনুগ্রহ করে রোজ সামান্য প্রসাদ গ্রহণ করে আমাদের ধন্য করুন।
__________________________________
জয় মা ....

"শান্ত ভাব শক্তির উচ্চতম বিকাশ।
..........শান্ত ব্যক্তি অলস ব্যক্তির ন্যায় নয়। "

শান্তভাব হল সত্ত্বভাব আর অলসতা হল জড়তা কখনই এক নহে। সংযত শান্ত আচরণ করাতে উচ্চ শক্তির প্রয়োজন,মহাশক্তিধর না হলে এই সংযত ভাব প্রাপ্ত হওয়া অসম্ভব। যা আমরা মৌনী সাধুর আচরণ ও ব্যবহারের মধ্যে করলাম অবলোকন। আর অসংযত অশান্ত ভাব আসলে অহংকারের বহিঃপ্রকাশ তাতে হয় অন্তঃশক্তির  অপচয়।আর সেটাই অসংযত দুর্ব্যবহার রূপে প্রক্ষিপ্ত হয়।যা আমরা তহশীলদারের আচরণের মধ্যে দেখতে পেলাম।যদিও তার মধ্যে পরিবর্তন হলো - যথার্থ সাধুসঙ্গে এবং সেটা অবশ্যই ভগবৎকৃপা যা তার উপর বর্ষিত হল সন্তকৃপারূপে।কারণ সে আর যাই হোক, যতই অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকুত --- সে ঐ মন্দিরটির পরিচালন তথা রক্ষাণাবেক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিল এবং সেটি একটি মহৎ কাজ বা কল্যাণকারী কাজ।কল্যাণকারীর অধোগতি হয় না, ভগবান স্বয়ং হতে দেন না।তাই তাঁর দূয়ারে স্বয়ং সচ্চিদানন্দ ঈশ্বর মৌনী সাধুর বেশে এসে তাঁর মধ্যে দেবত্বের জাগরণ করিয়ে দিলেন, তাঁর মনের সকল রজোগুণের লালিমা তৎসঙ্গের তমোগুণের কালিমা দূর হয়ে ক্ষমাপ্রার্থণার দ্বারা শুদ্ধ স্বচ্ছ সত্ত্বের হল প্রকাশ।
তাই তো বলে--- "বিনু সৎসঙ্গ বিবেক ন হই।"

জয় মা।জয় ঠাকুর।জয় স্বামীজী।

Powered by Blogger.