“কামিনী--কাঞ্চনই যোগের ব্যাঘাত। বস্তু বিচার করবে। মেয়েমানুষের শরীরে কি আছে -- রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মুত, বিষ্ঠা এইসব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন? II কথামৃত--দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ১৮৮২, ২৪শে আগস্ট
"তব
কথামৃতং তপ্তজীবনং,
কবিভিরীড়িতং
কল্মষাপহম্ ৷
শ্রবণমঙ্গলং
শ্রীমদাততং, ভুবি
গৃণন্তি যে ভূরিদা জনাঃ ৷৷"
কথামৃতে
আজকের দিন-
"তব
কথামৃতং তপ্তজীবনং,
কবিভিরীড়িতং
কল্মষাপহম্ ৷
শ্রবণমঙ্গলং
শ্রীমদাততং, ভুবি
গৃণন্তি যে ভূরিদা জনাঃ ৷৷"
কথামৃতে আজকের দিন-
দ্বিতীয়
পরিচ্ছেদ
১৮৮২,
২৪শে আগস্ট
কামিনী-কাঞ্চনই
যোগের ব্যাঘাত -- সাধনা
ও যোগতত্ত্ব
শ্রীরামকৃষ্ণ
দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে
ভক্তসঙ্গে বিরাজ করিতেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ই
ভাদ্র ১২৮৯), শ্রাবণ-শুক্লা
দশমী তিথি, ২৪শে
আগস্ট ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দ।
আজকাল
ঠাকুরের কাছে হাজরা মহাশয়,
রামলাল,
রাখাল
প্রভৃতি থাকেন। শ্রীযুক্ত
রামলাল ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র,
-- কালীবাড়িতে
পূজা করেন। মাস্টার আসিয়া
দেখিলেন উত্তর-পূর্বের
লম্বা বারান্দায় ঠাকুর হাজরার
নিকট দাঁড়াইয়া কথা কহিতেছেন।
তিনি আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া
ঠাকুরের শ্রীপাদপদ্ম বন্দনা
করিলেন।
ঠাকুর
সহাস্যবদন। মাস্টারকে বলিতেছেন,
“আর দু-একবার
ঈশ্বর বিদ্যাসাগরকে দেখবার
প্রয়োজন। চালচিত্র একবার
মোটামুটি এঁকে নিয়ে তারপর
বসে বসে রঙ ফলায়। প্রতিমা
প্রথমে একমেটে, তারপর
দোমেটে, তারপর
খড়ি, তারপর
রঙ -- পরে
পরে করতে হয়। ঈশ্বর বিদ্যাসাগরের
সব প্রস্তুত কেবল চাপা রয়েছে।
কতকগুলি সৎকাজ করছে,
কিন্তু
অন্তরে কি আছে তা জানে না,
অন্তরে
সোনা চাপা রয়েছে। অন্তরে ঈশ্বর
আছেন, -- জানতে
পারলে সব কাজ ছেড়ে ব্যাকুল
হয়ে তাঁকে ডাকতে ইচ্ছা হয়।”
ঠাকুর
মাস্টারের সঙ্গে দাঁড়াইয়া
কথা কহিতেছেন -- আবার
কখন কখন বারান্দায় বেড়াইতেছেন।
[সাধনা -- কামিনী-কাঞ্চনের ঝড়তুফান কাটাইবার জন্য ]
শ্রীরামকৃষ্ণ
-- অন্তরে
কি আছে জানবার জন্য একটু সাধন
চাই।
মাস্টার
-- সাধন
কি বরাবর করতে হয়?
শ্রীরামকৃষ্ণ
-- না,
প্রথমটা
একটু উঠে পড়ে লাগতে হয়। তারপর
আর বেশি পরিশ্রম করতে হবে না।
যতক্ষণ ঢেউ, ঝড়,
তুফান আর
বাঁকের কাছ দিয়ে যেতে হয়,
ততক্ষণ
মাঝির দাঁড়িয়ে হাল ধরতে হয়,
-- সেইটুকু
পার হয়ে গেলে আর না। যদি বাঁক
পার হল আর অনুকুল হাওয়া বইল,
তখন মাঝি
আরাম করে বসে, হালে
হাতটা ঠেকিয়ে রাখে, --
তারপর পাল
টাঙাবার বন্দোবস্ত করে তামাক
সাজতে বসে। কামিনী-কাঞ্চনের
ঝড় তুফানগুলো কাটিয়ে গেলে
তখন শান্তি।
[ঠাকুর
শ্রীরামকৃষ্ণ ও যোগতত্ত্ব
-- যোগভ্রষ্ট
-- যোগাবস্থা
-- “নিবাতনিষ্কম্পমিব
প্রদীপম্” -- যোগের
ব্যাঘাত ]
“কারু
কারু যোগীর লক্ষণ দেখা যায়।
কিন্তু তাদেরও সাবধান হওয়া
উচিত। কামিনী--কাঞ্চনই
যোগের ব্যাঘাত। যোগভ্রষ্ট
হয়ে সংসারে এসে পড়ে, --
হয়তো ভোগের
বাসনা কিছু ছিল। সেইগুলো হয়ে
গেলে আবার ঈশ্বরের দিকে যাবে,
-- আবার সেই
যোগের অবস্থা। সট্কা কল
জানো?”
মাস্টার
-- আজ্ঞে
না -- দেখি
নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ
-- ও-দেশে
আছে। বাঁশ নুইয়ে রাখে,
তাতে বঁড়শি
লাগানো দড়ি বাঁধা থাকে। বঁড়শিতে
টোপ দেওয়া হয়। মাছ যেই টোপ খায়
অমনি সড়াৎ করে বাঁশটা উঠে পড়ে।
যেমন উপরে উঁচুদিকে বাঁশের
মুখ ছিল সেইরূপই হয়ে যায়।
“নিক্তি,
একদিকে
ভার পড়লে নিচের কাঁটা উপরের
কাঁটার সঙ্গে এক হয় না। নিচের
কাঁটাটি মন -- উপরের
কাঁটাটি ঈশ্বর। নিচের কাঁটাটি
উপরের কাঁটার সহিত এক হওয়ার
নাম যোগ।
“মন স্থির
না হলে যোগ হয় না। সংসার-হাওয়া
মনরূপ দীপকে সর্বদা চঞ্চল
করছে। ওই দীপটা যদি আদপে না
নড়ে তাহলে ঠিক যোগের অবস্থা
হয়ে যায়।
“কামিনী--কাঞ্চনই
যোগের ব্যাঘাত। বস্তু বিচার
করবে। মেয়েমানুষের শরীরে কি
আছে -- রক্ত,
মাংস,
চর্বি,
নাড়ীভুঁড়ি,
কৃমি,
মুত,
বিষ্ঠা
এইসব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা
কেন?
“আমি
রাজসিক ভাবের আরোপ করতাম --
ত্যাগ
করবার জন্য। সাধ হয়েছিল সাচ্চা
জরির পোশাক পরব, আংটি
আঙুলে দেব, নল
দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক খাব।
সাচ্চা জরির পোশাক পরলাম --
এরা (মথুরবাবু)
আনিয়ে
দিলে। খানিকক্ষণ পরে মনকে
বললাম, মন
এর নাম সাচ্চা জরির পোশাক!
তখন সেগুলোকে
খুলে ফেলে দিলাম। আর ভাল লাগল
না। বললাম, মন,
এরই নাম
শাল -- এরই
নাম আঙটি! এরই
নাম নল দিয়ে গুড়গুড়িতে তামাক
খাওয়া! সেই
যে সব ফেলে দিলাম আর মনে উঠে
নাই।”
সন্ধ্যা
আগত প্রায়। ঘরের দক্ষিণ-পূর্বের
বারান্দায়, ঘরের
দ্বারের কাছে ঠাকুর মণির সহিত
নিভৃতে কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ
(মণির
প্রতি) -- যোগীর
মন সর্বদাই ঈশ্বরেতে থাকে,
সর্বদাই
আত্মস্থ। চক্ষু ফ্যালফ্যালে,
দেখলেই
বুঝা যায়। যেমন পাখি ডিমে তা
দিচ্ছে -- সব
মনটা সেই ডিমের দিকে,
উপরে
নামমাত্র চেয়ে রয়েছে!
আচ্ছা আমায়
সেই ছবি দেখাতে পার?
মণি --
যে আজ্ঞা।
আমি চেষ্টা করব যদি কোথাও পাই।
"ওঁ
নিরঞ্জনং নিত্যমনন্তরূপং
ভক্তানুকম্পাধৃতবিগ্রহং
বৈ।
ঈশাবতারং
পরমেশমীড্যং তং রামকৃষ্ণং
শিরসা নমামি।।"
Post a Comment