Header Ads

Ramakrishna sarada ashram Antpur II (রামকৃষ্ণ সারদা আশ্রম (আঁটপুর) থেকে প্রকাশিত ২০১০-২০১১ বার্ষিক

(রামকৃষ্ণ সারদা আশ্রম (আঁটপুর) থেকে প্রকাশিত ২০১০-২০১১ বার্ষিক '
     
   (১৯শ পর্ব)
ভুবনেশ্বরমঠ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি, সূত্রপাত হয়েছে মাত্র। রাজা মহারাজ সেখানেই আছেন - মঠ গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত। শিষ্যা তারাসুন্দরী আজীর্ণ রোগে ভুগছেন। মহারাজ বললেন ভুবনেশ্বরে কেদার-গৌরীর জল নিয়মিত খেলে সবরকম পেটের রোগ ভাল হয়। তারাসুন্দরী গেলেন ভুবনেশ্বর। দুধওয়ালা ধর্মশালায় থাকেন কিন্তু শ্রী রামকৃষ্ণের প্রসাদ ছাড়া অন্য কোন কিছুই খাবেন না।মঠ থেকে রোজ প্রসাদ পাঠানোর বন্দোবস্ত হলো। স্বামী ব্রহ্মানন্দের তাই নিয়ে রোজ তাড়া। ঠাকুরের ভোগ হতেই আগে পাঠিয়ে দিতেন দুধওয়ালা ধর্মশালায়। তাঁর এত ছটফটানির কারণ
"তাঁর তারামা পজো করে এখনো পর্যন্ত জলটুকুও মুখে দেয়নি।" যে লোকটি প্রসাদ নিয়ে যেত তার একখুঁটে প্রসাদী পান অন্য খুঁটে চা-চিনি। তখন ভুবনেশ্বরে ওসব জিনিস পাওয়া যায় না। তারাসুন্দরীর চোখে জল আসত-পিতৃস্নেহ কি তা তিনি কোনদিন জানতে পারেন নি - গুরুস্নেহধারায় তাঁর সে অভাব দূর হয়ে যেত। কোনদিন হয়ত সঙ্কোচে কুন্ঠায় বলেছেন, " কাল থেকে আমি নিজে এসেই প্রসাদ পেয়ে যাব।" তীব্র ভাবে নিষেধ করেছেন স্বামী ব্রহ্মানন্দ, "না, নাগো তারামা, দুপুরে বড় রোদ্দুর-এদেশে গাড়ী পাওয়া যায়না। তুমি কষ্ট করে এসো না-আমিই তোমায় প্রসাদ পাঠিয়ে দেব।" তারাসুন্দরী নীরবে বসে চোখের জলে ভেসেছে - এত নিস্বার্থ স্নেহ! সমাজের জ্ঞানীগুণী মানুষেরা যখন এই দেহটির প্রতি ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে
তখনই সেই নরদেহধারী ঈশ্বরের করুণার পাবণী ধারা তাঁঁর মানস পুত্রের মাধ্যমে এই পতিতার প্রতি বর্ষিত হচ্ছে! এই অহেতুকী কৃপার যোগ্য কী আমি!
শিশু সারদার স্বামী নির্বাচন এক যাত্রার আসরে। উত্তরকালে তিনিই এগিয়ে এলেন অভিনয় জগতের প্রেরণাদত্রীর ভূমিকায়। শ্রীরামকৃষ্ণের তিরোভাব ও গিরিশচন্দ্রের লোকান্তরের পরবর্তিকালে স্বয়ং সারদাদেবী শ্রীরামকৃষ্ণের এই শূণ্যস্থানটি পূর্ণ করেছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ যে আদর্শ স্থাপন করে গেলেন, আদর্শ অনুসরণ করে এগিয়ে গেলেন সঙ্ঘজননী।                             
                          (২০শ পর্ব)
মা সারদা তখন ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 'উদ্বোধনে' ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছেন। দুপুরবেলা। তারাসুন্দরী এসে বসেছেন সামনের বারান্দায়। মাকে ভক্তিভরে প্রণাম করে যুক্তকরে বসে মৃদু স্বরে  কথা কইছেন। মা বললেন, " থিয়েটারে তো বেশ বলো। কেমন সেজেগুজে আসো - তখন আর তোমাকে চেনাই যায়না। আচ্ছা,
আমাদের এখন একটু শোনাও দেখি।' মাতৃ আদেশ
! জোড় হাত করে মা সারদাকে নমস্কার করে 'জনা'
থেকে আবৃত্তি করতে শুরু করলেন - প্রবীরের বীর রসাত্মক সংলাপের কিছু অংশ। সমস্ত বারান্দা, ঘোর,দোর,ছাদের কার্নিসে কার্নিসে প্রতিধ্বনিত হতে
লাগলো তারার সেই যাদুকরী ক ন্ঠস্বর। সবাই নিঃশব্দ, হতবাক্। অভিনয় শেষ করে প্রণাম করে সেদিনের মতো বিদায় নেবার সময় মা বললেন ,
" আর একদিন সময় করে এসো।" 
একদিন কেন অনেকদিনই গেছেন তারাসুন্দরী। সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন সে যুগের আর এক প্রসিদ্ধ অবিনেত্রী তিনকড়িকে। কখনও তিনি ঠাকুরের ঘরে প্রবেশ বা মা-য়ের শ্রীচরণ স্পর্শ করতেন না। বাইরে বসেই গলবস্ত্র হয়ে মা ও ঠাকুরকে প্রণাম করতেন। মা তাঁদের যত্ন করে প্রসাদ খাওয়াতেন তারপর নিজহস্তে পান দিতে। একদিন মা তিনকড়িকে বললেন, "বিল্বমঙ্গল- নাটকের পাগলিনীর ' আমায় নিয়ে বেড়ায় হাত ধরে ' গানটি একটু শোনাওতো মা।" তিনকড়ি প্রানমন সমর্পন করে তাঁর অনবদ্য কন্ঠস্বরে গানটি গাইতে লাগলেন। ভাবাবিষ্ট মা সারদা সমাধিস্থ হলেন। কিছুক্ষন পরে পরমস্নেহে তিনকড়িকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন- " আজ কি গানই শোনালি মা।"
     
                          (২১শ পর্ব)
জগজ্জননীর স্নেহের দুর্বার আকর্ষণে তারাসুন্দরী অস্থির হয়ে পড়তেন। কিভাবে ে মায়ের সেবা করবেন ভেবে পেতেন না। হঠাৎ হাজির ট্যাক্সি করে। গাড়ি বোঝাই মালপত্র-দই, মিষ্টি, ম্যাঙ্গোষ্টীন, লেবু, কলা, বাতাবি, আঙুর, বেদানা, আনারস। নিয়ে এসেছেন রজনীগন্ধার গুচ্ছ, সকলের জন্য কাপড় ও ছোটদের জন্য পশমী জুতো। যেন মেয়ে এসেছে মায়ের কাছে। যতটা এনেছেন তার থেকে আরো আরো অনেক বেশী আনতে পারলে যেন খুশী হতেন। নিঃস্ব হয়ে সব উজার করে দিতে পারলেই যেন তাঁর ভান্ডার পূর্ণ হতো। মা সারদার
সেদিন জ্বর। দরজার বাইরে থেকে প্রণাম করলেন তারাসুন্দরী। মা হাত তুলে আশীর্বাদ করলেন। ভগবতীর দয়া কাঁটাগাছকে বাছে না-সে দয়ার পাত্র পাত্রী নেই,সে দয়ার বিচার করে না, ব্যবহারিক জগতের কোন বিধি নিষেধ মানে না; সে কেবল  জাতি-ধর্ম নির্বিচারে সকলকে পবিত্র করে নেয়।
জীবনের সহস্র লাঞ্ছনার, ঘৃনা ও উপেক্ষার মধ্যেও তারার জীবনে শ্রীমার এই প্রাণ উজার করা আশীর্বাদ তাঁকে মহত্তর ভাবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল।
কিন্তু না জগজ্জননীর সেবা করার সুযোগ তারাসুন্দরী বেশীদিন পেলেন না। ১৯২০জুলাই ৩রা শ্রাবন।  সকাল থেকেই প্রকৃতিতে বিষন্নতার সুর। মার অসুখ বাড়াবাড়িতে পৌঁছে গেছে। রাধুকে এক সপ্তাহ আগেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তোদের মায়া একবারে কাটিয়েছি। যা যা আর পারবিনি। কুটো ছেঁড়া করে দিয়েছি। তুই আমার কী করবি? সারদানন্দজী হতাশ হয়ে বললেন," তবে আর মাকে রাখা গেল না। আর আশা নেই। " সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। শ্রীশ্রী মায়ের ফুসফুস দুটি কেউ যেন সাঁড়াশী দিয়ে চেপে ধরেছে। উত্থানশক্তি হীন দেহটিতে যুক্ত হয়েছে শ্বাসের টান। আবের মতো চোখ দুটি ঠেলে বেড়িয়ে এসেছে। রাত ১১টায় অক্সিজেন দেবার ব্যবস্থা হলো। দন্ড,পল একেকটি মুহূর্ত যেন অনন্ত কালের মত দীর্ঘ। সময় মধ্য রাত। শ্বাসের শব্দ হঠাৎই গতি হারিয়ে মন্থর হয়ে গেল। কয়েক মিনিটের নিস্তব্ধতা। জোড়ায় জোড়ায় চোখগুলি সব নিথর স্থির। বর্ষনসিক্ত শ্রাবণের
নীরব রাত্রের কিছু শোকার্ত শরীরের কান্নার রোল বাগবাজারের আকাশ বাতাস ভারাক্রান্ত করে তুললো।

     
                          (২২শ পর্ব)
খবর পৌঁছল তারাসুন্দরীর কাছে। মাতৃহারা শিশুর মতন আকুল কান্নায় বিছানায় আছড়ে পড়লেন তারা। যে মহাশক্তির আশীর্বাদ মাথায় ধারণ করে জীবনের বন্ধুর পথটুকু পার হবেন ভেবেছিলেন , সেই মহাশক্তিও অন্তর্হিত হলো।আর মা বলে ডেকে
কারুর কাছে গিয়ে শান্তি ভিক্ষা করার পথটিও রুদ্ধ হয়ে গেল। তারাসুন্দরী মনপ্রান সঁপে দিলেন তাঁর দীক্ষাগুরু স্বামী ব্রহ্মানন্দের পয়ে। জ্বালা-যন্ত্রণায়,  দুঃখে-হতাশায় তাঁর একমাত্র সহমর্মী রাজা মহারাজকে জীবনের সম্বল করে জীবনের বাকী পথটুকু হাঁটার স্বপ্ন দেখলেন। কিন্তু না, মায়ের তিরোধানের পর দুটি বছর কাটতে না কাটতেই সেই ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ তারার সমস্ত সপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিল। ১৯২২সালের ১০ই এপ্রিল, সোমবার রাত্রি পৌনে নটায় শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র রাজা মহারাজ নিত্যলীলায় প্রবেশ করলেন। শোকস্তব্ধ তারাসুন্দরী সুদূর দিগন্ত রেখায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মূক হয়ে রইলেন। রাজা মহারাজের তিরোভাবে এক অসীম শূণ্যতা যেন তারাসুন্দরীকে গ্রাস করলো। জগতটা যেন পাল্টে গেল। অসহায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে শোকে দুঃখে মৃত প্রায় হয়ে শয্যা গ্রহন করলেন। অভিনয় ছেড়ে দিলেন। আর যেন সংসারে থাকবেন না, এমন পাগলের মতো অবস্থা। এই অসীম শূণ্যতার মধ্যে রাজা মহারাজের স্মতিচারণ করে লিখলেন:
"কে আমি? সমাজের কোন স্তরে আমার স্থান? কত-কত নিম্নে ঘৃণা আর অবজ্ঞা ছাড়া জগতের কাছে যার প্রাপ্য আর কিছু নাই - না বন্ধু -না পিতা - না আত্মীয় -এত বড় সংসারটা - এ যেন একটা পরের বাড়ী। স্বার্থ ভিন্ন কেউ কথা কয় না ,ফিরেও চায় না- জগতে আপনার বলতে কেউ নেই। স্বামী
ব্রহ্মানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, সর্বপূজ্য,সর্বমান্য মহারাজ, কি আকুল আগ্রহে,কি অকৃত্রিম স্নেহে, কি অপ্রত্যাশিত যত্নে আমাকে আপনার করিয়া লইলেন।"
শান্তির শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে অসহায় তারাসুন্দরী মঠে যাবার মতো মানসিক অবস্থাটুকু হারিয়ে ফেললেন
     
                          (২৩শ পর্ব)
শান্তির শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে অসহায় তারাসুন্দরী
মঠে যাবার মতো মানসিকতা অবস্থাটুকুও হারিয়ে ফেললেন। স্বামী শিবানন্দ লোক পাঠিয়ে তারাসুন্দরীকে ডেকে আনলেন।
- কি গো তারা মা , আর আস না কেন?
-  আর কার কাছে আসব মহারাজ? রাজা -  মহারাজই তো নেই।
- সে কি গো নেই কি? ঠাকুর আছেন আমরা আছি।
আর সর্বোপরি আছে শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ। যে দীপ
তিনি জ্বেলে দিয়ে গেছেন - সে যে অনির্বাণ! সেই দীপে আলোকিত করো নিজেকে - নিজের শিল্প সুষমায় বাংলার মানুষকে।
সেই অনির্বাণ দীপের উদ্ভাসিত আলোকে বিভাসিত হয়ে তাঁর শিল্প সুষমায় সমকালীন বঙ্গসমাজকে তিনি অভিভূত করে রাখলেন। মিনার্ভা থিয়েটারের এক সভায় শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল মহাশয় বলেছিলেন: "ইউরোপ ও আমেরিকার কোন রঙ্গমঞ্চে তারাসুন্দরীর রিজিয়ার ভূমিকায় অভিনয়ের মতো অভিনয় তিনি দেখেন নাই।" কারও কারও মতে তারাসুন্দরী পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্টা
অভিনেত্রীদের অন্যতমা। বিনোদিনীর মতো তারাসুন্দরীও সুলেখিকা ছিলেন। তাঁর রচনার মধ্যে
আত্মানুসন্ধান ও আত্মানুশোচনার একটি অকৃত্রিম
সুর সুস্পষ্ট হয়ে আছে। তাঁর সমগ্র জীবনের মধ্যে ত্যাগ ও বৈরাগ্যের রূপটি ফুটে ওঠে তা সমকালীন সকল অভিনেত্রীদের থেকে তাঁকে এক স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
"সৌরভ" পত্রিকায় প্রকাশিত তারাসুন্দরীর দুটি কবিতার কিছু প্রাসঙ্গিক অংশের দিকে দৃম্টিপাত করলে তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টির একটি সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর একটি কবিতা "প্রবাহের রূপান্তর" -এ তিনি লিখেছেন-
শ্মশান জীবন মম নন্দনকানন সম
পাপস্মৃতি দূরে গেছে ফুটেছে নয়ন।
জীবনের গুরুভার,কাতর করে না আর
কে আমার ঘুচাইল ভ্রম আচ্ছাদন?
ক্ষুদ্রমতি নারীপ্রাণ, অর্থ আশা অভিমান
কালের কুটিল স্রোতে, হয়ে দিশাহারা।
অন্ধকার আলিঙ্গন, করিয়াছি আজীবন
প্রলোভনে সঁপি মন হইয়াছি সারা।
ভবিষ্যৎ বিভীষিকা, প্রেতময়ী মরীচকা
প্রতিকৃতি যদি তার,মিলেছে আমার।
যৌবনে প্রবৃত্তি যত,সৌরভে করবে রত
পরিমল পবিত্রতা কর অনুসার।
অথবা তাঁর "কুসুম ও ভ্রমর" কবিতায় উদ্ভিন্ন যৌবনের হাহাকার তিনি ব্যক্ত করেছেন -
নারীর যৌবন সম গরব তোমার।
যতদিন মধু রবে, আদরের ধন হবে ,
অবহেলে বিলাইলে, মান আপনার।
না বুঝিলে ছলনা এ কুটিল ধরার।
সুবাস ধরছে বুকে,কি হেতু ছড়াও?
গুনের গরিমা নাই, অযতনে বুঝি তাই
সাধের সৌরভ হায়! অবাধে লুটাও।
বিকৃতি প্রকৃতি লয়ে কিবা সুখ পাও?
বিচিত্র চরিত্রে মুগ্ধ, অন্তর আমার!
খেলিলে পবন সনে, সুমধুর আবাহনে,
পরাগ ছড়ায়ে মোরে ডেক' নাকো আর!
অনুমাত্র পড়ে আছি - ধরে এ সংসার!
অন্ধকার জীবনের ভোগ লোলুপতা, নির্যাতিত, নারী সমাজের যন্ত্রণা,নিশিথের বিকৃত যাত্রীদের নিঃশব্দ পদচারণা তারাসুন্দরীকে একদিন উদাস করে তুলেছিল। তাঁর আত্মানুশোচনা তীব্রতর হয়ে তাঁকে ত্যাগের পথে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাই সমাজ থেকে দূরে সংসারে অনুমাত্র পড়ে থাকার মধ্যে জীবনের সার্থকতা খুঁজেছিলেন তারা।

    
                          (২৪শ পর্ব)
স্বামী ব্রহ্মানন্দের তিরোভাবের পর স্বামী শিবানন্দের (মহাপুরুষ মহারাজের) নির্দেশে তারাসুন্দরী ভুবনেশ্বরে 'রাখাল কুঞ্জে' স্বামী ব্রহ্মানন্দের নামানুসারে স্মৃতি মন্দির নির্মাণ শুরু
করেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দ তাঁর জীবদ্দশায় এই ভূমিতে দাঁড়িয়ে ধ্যানস্থ অবস্থায় বলেছিলেন "সাধন ভজনের উপযুক্ত স্থান - গোমুখী ভূমি,ঈশানে ঈশান
( ভুবনেশ্বরের মন্দির) । তারাসুন্দরীর সাধন পদ্ধতি ছিল সত্যই অভিনব। কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে গেছে তিনি ধ্যানে ডুবে থেকেছেন। একবার পাশের স্কুলবাড়ীতে আগুন লেগেছিল, ওঁর গোয়ালঘর বাঁচাবার জন্য লোক জড় হয়েছে। হৈ হল্লা চিৎকারে মুখরিত চারিপাশ, তবুও তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হয়নি তিনি
ধ্যানে ডুবে ছিলেন। আবার কখনো তাঁর ুপাসনা পদ্ধতির বৈচিত্র্য দেখে আনাতোল ফ্রাঁসের সেই বিখ্যাত গল্প. " OUR LADY'S JUGGLER"- এর কথা মনে পড়ে যায়। মনে হয় যেন গল্পের সেই কাল্পনিক ভ্রাম্যমান পথের-যাদুকর সত্য সত্যই একদিন তারাসুন্দরীর শরীর ধারণ করে অবতীর্ণ হয়েছিলেন কলকাতার এক পতিতাপল্লীর অন্ধকার
গলিতে। কোথায় মিল - আনাতোল ফ্রাঁসোর কাল্পনিক যাদুকরের গল্পটিই বা কী? শোনা যাক সেই গল্প।
আকাশ ছোঁয়া চার্চের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা একটি সুন্দর পার্ক। ফ্রাঁসোর পথের-যাদুকর পথে পথে শিশুদের যাদুর খেলা দেখিয়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে প্রতিদিন বিশ্রাম নেয়। অপলক নেত্রে চেয়ে থাকে ঐ নীরব, শান্ত পবিত্র চার্চটির দিকে। তার জামা কাপড় ময়লা তাই সে চার্চে প্রার্থনা সভায় ঢুকতে পারে না। মনে খুব ইচ্ছা এদিন চার্চে প্রবেশ করে দেখবে মা মেরীর কোলে তার শিশু প্রভুকে। প্রিস্টরাই বা কেমন - কোন ধারণাই নেই তার। একদিন কোথাও কোন মানুষের উপস্থিতি না দেখে সে চার্চে প্রবেশ করলো। দেখল প্রিস্টরা মা মেরীর উপাসনা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানলেন সব প্রিস্টরাই খুব গুণী। কেউ ধর্ম পুস্তক লেখেন, কেউ সেই বইয়ের অনুলিপি রাখেন,আবার কেউ সেইবইয়ের পাতায় ছবি আঁকেন; আবার কেউ মেরীর সম্বন্ধে স্তোত্র রচনা করেন, কেউ আবার মা মেরী ও তাঁর প্রভুর গান গেয়ে থাকেন। এঁদের সেই সুন্দর জীবনযাত্রা দেখে যাদুকরের নিজের সম্বন্ধে ধিক্কার এলো। আমি বই লিখতে পারি না, ছবি আঁকতে পারি না, স্তোত্র রচনা করতে পারি না-কিছুই জানিনা আমি।
Powered by Blogger.